যখন ইন্টার মিডিয়েট প্রথম বর্ষে পড়ি বাংলা ক্লাস নিতেন নমিতা ম্যাডাম,পড়ার ফাঁকে একদিন আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন “নারী” আর “না’রি” র মধ্যে পার্থক্য কি? সেদিন মনে অনেক আস্থা নিয়ে বলতে পেরেছিলাম “নারী” মানে আল্লাহর সৃষ্টি “মানুষ” আর “না’রি” মানে “পারিনা”। আমার এহেন ঝটপট উত্তর শুনে খুব খুশি হয়ে ম্যাডাম বলেছিলেন “ভেরি গুড”। আজ নমিতা ম্যাডাম বেঁচে নেই, খুব করে মনে পরছে হঠাৎ সে দিনটার কথা, ম্যাডাম বেঁচে থাকলে কাছে গিয়ে “সরি” বলে আসতাম, বলতাম আমার সেদিনের উত্তরটা ভুল ছিল ম্যাডাম “নারী” মানে মানুষ নয়, “নারী” মানুষ হয়না, “নারী” তো কেবল রূপক অর্থে মানুষ, “নারী” কেবলই পণ্য, “নারী” শুধুই ভোগের সামগ্রী।
“নারী”র নিজস্বতা বলে কিছু থাকতে নেই, শুনেছি “নারী”কে নাকি বিধাতাই সৃষ্টি করেছেন পূরুষের বাঁদী হিসাবে, সেবিকা হিসাবে, ক্লান্ত, শ্রান্ত পুরুষ তাঁর তেষ্টা মিটাবে “নারী”র স্পর্শে, কামুক পুরুষের কামনা পরিপূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত “নারী” তাঁর বাহুবন্দী দাসী। “নারী”র ইচ্ছে অনিচ্ছের তোয়াক্কা কে করে? “নারী” মেনে নেয়, ভাবে এই তাঁর পরম ধর্ম নিজেকে পুরুষ মানুষের যোগ্য ভোগ্য পণ্য হিসাবে গড়া।
“নারী” খুব ছোটবেলা থেকেই তোমাকে কোনঠাসা করে বাড়তে দেয়া হয়, শেখানো হয় কিছু চিরাচরিত বুলি,যার বাইরে তুমি যেতে পারোনা, যদি যাও সমাজ সংসারের কি বীভৎস ঘৃনাভরা দৃষ্টি সবার, যা সইবার ক্ষমতা দেয়নি বিধাতা তোমায়।
আজন্ম পরাধীন তুমি, তোমার চলাফেরায় জীবনযাপনে তুমি কোন না কোনভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল, কোথাও তোমার নিরাপত্তা নেই, বাসে, ট্রামে চলার পথে তোমাকে নিজের সম্ভ্রম রক্ষায় কুঁকড়ে থাকতে হয়। কোন পুরুষ মানুষের পাশে বসে তুমি সহজ হতে পারোনা কখনও, কারণ তাঁরা তোমাকে মানুষই ভাবেনা। তাই নিজের সিট এর বাইরে এসে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় তোমার গাঁয়ে গাঁ ঘেষার সুখটুকু থেকে তাঁরা কেন বঞ্চিত হবে? হাত পা ছড়িয়ে না বসলে মানুষ হিসাবে তাঁদের যে বড় আত্মসম্মানে লাগে, তাতে তোমার সুবিধা না অসুবিধা তা নিয়ে ভাবার মত সময় কই? আর সেই মনমানসিকতা টুকুই বা ক’জনের আছে? !!!
তোমাকে সেই শৈশবেই শেখানো হয় কি করে সব দিক মানিয়ে চলতে হয়। কারণ তুমি যে “নারী” তোমাকে পারিনা বললে হবেনা তুমি যে সর্বংসহা...হা হা হা হা ।। সব সইতে হবে তোমাকে। কি বিশ্রীভাবে চলে তোমার প্রদর্শনী। চোখে জল আসে আমার। কেউ তোমার মনটা দেখেনা, দেখেনা তোমার যোগ্যতা, তাঁর চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায় তোমার দেহ শৌষ্ঠব, তোমার রুপ লাবন্যতা, যৌবনে কি ডিমান্ড তোমার...তোমাকে উপমা দেয়া হয় “হেভি মাল”... ছিঃ...লজ্জায় ঘৃনায় মরে যেতে ইচ্ছে করে আমার। “নারী” তোমাকে যারা “মাল” বলে সম্বোধন করে আমার তাঁদের মানুষ বলতে ঘেন্না হয়, খুব খুব বেশি ঘেন্না।
“নারী” সত্যি কি তুমি মানুষ? এর পরও কি তুমি নিজেকে মানুষ বলবে? পথে ঘাটে, আনাচে কানাচে, টিভি’তে পত্রিকার পাতায়, যেখানেই চোখ রাখি সেখানেই তোমার অপমান, তোমার অবহেলা, তোমার অসম্মান। মানুষ হিসাবে তোমার স্বীকৃতি দেয়নি স্বয়ং বিধাতাও, যার সৃষ্টি লগ্নেই অবহেলা তাঁর আবার কিসের আত্মসম্মানবোধ?
(আমি পূরুষ বিদ্বেষী কোন লিখা লিখতে চাইছিনা। আমি কেবল সেইসব মানুষদেরকে আমার মন থেকে ঘৃনাটুকু জানাতে চাইছি যারা “নারী”কে সম্মান করতে জানেনা আর তাই তাঁদের আমি মানুষও মনে করিনা কিন্তু দুঃখজনক হলেও আসল সত্যিটা হলো আমাদের এই নোংরা সমাজ ব্যবস্থায় এই শ্রেণীর কথিত মানুষের সংখ্যা এত বেশি যে হাতে গোনা যে কয়জন প্রকৃত মানুষ আছে তাঁরা মাথা তোলে দাঁড়াতেই পারেনা !!!)
এই লেখাগুলো পত্রিকায় দেওয়া যায় কিনা দেখো, বিবেক কে জাগিয়ে তোলার জন্য হলেও অন্তত এই কাজটা করা দরকার।
উত্তরমুছুন