জীবন নামের এই অদ্ভুত যন্ত্রটার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে ক’জন পারে? বরং চলতে হয় বলেই’না সবাই চলে। এমন একজন মানুষও আজকাল খুঁজে পাইনা যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারে আমি সুখী, আমি পরিপূর্ণ! একজীবনে এত অপূর্ণতা, এত হাহাকার নিয়েও মানুষ বেঁচে থাকে। সময় মানুষকে অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়, সময়ের যাতাকলে পিষে পিষে মানুষ মরতে মরতে বাঁচতে শেখে, হারতে হারতে জিততে শেখে, ঠকতে ঠকতে ঠকাতেও শেখে...হা হা হা... কি অদ্ভুত তাইনা?
আমার না মাঝে মাঝে অমানুষ হতে ইচ্ছে করে, খুব খুব বেশি খারাপ হতে ইচ্ছে করে। কারণ একটাই...”মানুষ হতে পারিনি বলে, পারিনি খুব বেশি ভাল হতে” । ছোটবেলায় মা’ বলতেন যাই হওনা কেন “নাম্বার -১” হবে তা না হলে কোন মূল্যই থাকবেনা, এখন দেখছি কথাটা ১০০% সত্যি। হয় ভাল’ না হয় মন্দ’ এ দুটো’রই রাজত্ব। খুব ভাল হতে পারিনি বলে খুব মন্দ হতে ইচ্ছে করে। মিডল এ পরে থাকার অনেক যন্ত্রনা। যেমন যন্ত্রনার যাতাকলে পিষে মরে মিডল ক্লাস পরিবার গুলো।
জীবন নামের এই গোলক ধাঁধা’র চক্করে পরেছি সেই ছোটবেলা থেকেই। আর পরেছি ভাগ্য নামক অদ্ভুত এক শক্তির বিড়ম্বনায়। ভাবতাম ভাগ্যকে নিজেকেই গড়তে হবে তাই প্রাণপনে লড়েছি ভাগ্যকে গড়তে। কিন্তু প্রতিবার ভাগ্য আমাকে ঊষ্ঠা দিয়ে সিটকে ফেলে দিয়েছে, আবার ঊঠে দাঁড়িয়েছি নতুন রূপে, নতুনভাবে...ফলাফল “শূন্য”। তাই আজ আমি বড় ক্লান্ত। এতদিনে একটা কথা আমি ভাল করেই বুঝে গেছি যে আসলে মানুষের কোন সাধ্যি নেই কিছু করার। প্রতিটা কাজ, প্রতিটা ঘটনা আমার কেন যেন মনে হয় সিলেকটেড। যার বাইরে আমরা কেউ চাইলেও যেতে পারিনা। কোন কিছু প্ল্যান করে করতে পারিনি আজও। একটা কিছু হয়ত ভাবলাম যে এটা করব কিন্তু তাঁর আগেই অন্য কিছুর উদ্ভব। তারপর সব ছেড়ে ছূড়ে নিজেকে সমর্পন করা সেই সময় নামক অদৃশ্য দানবের হাতে আর খেলনা হয়ে তাঁকে সংগ দেয়া যতক্ষন না সে ক্লান্ত হচ্ছে!
আমার জীবনে আমি অনেক বড় বড় মানুষের সান্নিধ্য পেয়েছি, আমার এই ছোট্ট জীবনের সঞ্চয় বলতে তাঁদের ওই স্নেহ আর ভালবাসাটুকুই। আর এই স্নেহের কাঙ্গাল হতে গিয়ে বিড়ম্বনায় যে পরিনি তা কিন্তু নয়! আবার ঊল্টোটাও হয়েছে, বয়সে ছোটদের খুব বেশি মায়া আর স্নেহ করতে গিয়েও ছোট হয়েছি, অপমানিত হয়েছি। ঘৃণায়, লজ্জায় আর অপমানে মরে যেতে ইচ্ছে করেছে, পারিনি... তবে হ্যাঁ নিজেকে মেরে ফেলেছি বহুবার, আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে তিলে তিলে মেরেছি নিজেকে অনেকবার। সেই সব সত্তাদের প্রেতাত্মারা আমাকে রোজ অভিশাপ দেয়, আর সেই অভিশাপে আজ জর্জরিত আমার এই জীবন নামের চাকা।
জীবন নামের এই গোলক ধাঁধার চক্করে ঘুরতে ঘুরতে বেশ কিছু অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। কাউকে খুব বেশি স্নেহ/ভালবাসতে নেই। সত্যিকারের স্নেহ/ভালবাসা বুঝে এমন লোকের আজ খুব অভাব। অনেকটা অপাত্রে কন্যাদানের মত। আমি আমার জীবনে কখনও কোনকিছুর বিনিময় চাইনি কিন্তু আমার ভাগ্যে বিনিময় জুটেছে। ওই যে কথায় আছেনা যা চাইনা তাই পাই অনেকটা সে রকমই। আমি মানুষ ভালবাসি, আমি ভালবাসতে ভালবাসি আর সেটা নিজের সমস্ত সত্তা দিয়ে...যার জন্য যতটুকু করি আমি আমার মন থেকে করি, আমার সবটুকু শ্রদ্ধা, ভক্তি আর ভালবাসা দিয়ে করতে চেষ্টা করি। সেইখানে কোন ফাঁকি নেই, নেই কোন ভণিতা। সেটা ছোট-বড়, নারী-পুরুষ, ধর্ম-বর্ণ সবার ক্ষেত্রেই সমান রেসপেক্ট বোধ, সমান গুরুত্ব।
“মানুষ’কে স্রেফ মানুষ ভেবে ভালবাসা” আমার এই সহজ সমীকরণ’টাকে কেউ’ই সহজ ভাবে নিতে পারেনা, ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে এমন জটিল বানায় যে বায়োলজির C-3 Circle কেও হার মানায়। আর বিনিময়ে আমার ভাগ্যে জুটে অবহেলা, অপমান, লাঞ্ছনা আর তিরস্কার। মেনে নেই আমি সব হাসি মুখে। কাউকে কিচ্ছু বলিনা, নিরবে নিভৃতে ভেতরে ভেতরে সেইসব মানুষ থেকে অনেক অনেক দূরে চলে যাই আমি যা হয়ত কেউ টেরও পায়না। অবশ্য তাতে কারও কিচ্ছু যায় আসেনা। কারও জন্যই কারো জীবন কখনও থেমে থাকেনা...সব চলে আগের নিয়মে, থাকেনা শুধু মায়াভরা মুখগুলোর নিস্পাপ হাসি, স্নেহমাখা সেই মধুর ডাক, আলতো করে নরম হাতের সেই ভালবাসার স্পর্শ আর কোমল ঠোঁটে মাথার উপর উষ্ণ আশীর্বাদের ছোঁয়া...!!!
পরে থাকে শুধু একফালি দীর্ঘস্বাসঃ...!!!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন