বাবা,
আজ অনেকদিন পর আপনাকে লিখতে বসলাম। মাঝে মাঝে ভাবি আপনাকে লিখব কিন্তু আর হয়ে উঠেনা। আপনি কি আমার উপর রেগে আছেন? খুব বেশি? আমি জানি বাবা যত রাগই হোকনা কেন আপনার আমার উপর সেটা বেশিক্ষন থাকবেনা তাইনা?
বাবা আজ প্রায় সাড়ে চার বছর হতে চলল আপনি আমাদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। এতদিনে অনেক কিছু বদলে গেছে। বদলে গেছে মানুষ, বদলে গেছে গাছপালা, বদলে গেছে দেশের সবকিছু। যে দেশ নিয়ে অনেক ভাবতেন আপনি, বলতেন সামনে অনেক কঠিন সময়, ভাবতেন আমরা কিভাবে বাঁচবো ? কিভাবে টিকে থাকবো ? হ্যাঁ বাবা সত্যি অনেক কঠিন সময় এখন চলে এসেছে। সবাই চলতে পারছে বাবা, কারও কোনরকম কষ্টই হচ্ছেনা, সবাই সময়ের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারছে। মা, আপনার একমাত্র ছেলে, আপনার ছোট মেয়ে সবাই...সবাই খুব ভালভাবে শিখে গেছে কিভাবে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হয়। কিন্তু আপনার বড় মেয়েটা ? সেই আগের মতই আছে, সে শুধু পারছেনা যুগোপযোগী হতে। চিরটাকাল বোকা ছিল তাই আজও বোকাই রয়ে গেল, বড়রা একটু বোকায় হয় তাইনা বাবা? নিজের ঘর অন্ধকার রেখে যে অন্যের ঘর আলোকিত করার চেষ্টা করে তাকে এ যুগে বোকা খেতাব দেয়া হয় বাবা। কিছুদিন আগে আপনার ছোট মেয়ের বিয়ে হলো মহাধুমধাম করে। নিজেকে সরিয়ে রাখতে গিয়েও পারিনি বাবা। কেন জানেন? আপনার জন্য। আপনার নাম করে লোকে বলবে অমুক সাহেবের বড় মেয়েটা অনেক হিংসুটে, মনটা অনেক ছোট হাবিজাবি আরো কত কি? আর আপনার মেয়ে হলে কি হবে সেতো আমারও বোন। একমাত্র বোন তাই সব নিজ হাতে করেছি আমি। ভাল করিনি বাবা? আপনি ভাবছেন এমন তো কথা ছিলনা, এমন হল কেন???
হাহাহাহাহাহাহা...... বাবা পৃথিবী অনেক বদলে গেছে। এখন এখানে এমন অনেক কিছুই হয় যা হওয়ার কথা ছিলনা। আমরাও মেনে নিই, না নিয়েই বা কি করব?
আপনাকে কি যেন লিখতে বসেছিলাম ভুলে গেছি কেন? বাবা জানেন আজকাল আমি অনেক কিছুই ভুলে যাই। আমি কি ফুরিয়ে যাচ্ছি বাবা? হ্যাঁ মনে পরেছে...আচ্ছা বাবা আপনার বড় মেয়েটা কি খুব কঠিন? তাঁকে কি কখনও পড়া যায়না? তাহলে আপনি পড়তেন কিভাবে? আপনিও তো মানুষ ছিলেন। সবাই আমাকে ভুলবুঝে কেন? কিছুদিন আগে বাচ্চা একটা ছেলেও ভুল বুঝল। এত খারাপ লেগেছিল আমার তখন।
আমার এই মানব প্রেমকে কেউ সহজভাবে নেয়না কেন? একজন মানুষ হয়ে মানুষকে ভালবাসা কি অন্যায়? এখন আত্তার রিলেশনটাকে কেউ বড় করে দেখেনা বাবা। আমার যে খুব কষ্ট হয় তখন, আমার যে মানুষকে মানুষ ভাবতেই অনেক বেশি ভাল লাগে, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, ছোট, বড় কোন বিভেদই যে আমার ভাল লাগেনা। তাইতো আমার ভালোবাসাটাকে মানুষ অন্যভাবে নেয়, অন্য একটা অর্থ দাঁড় করায় যা আমার পরিচিত নয়। তখন যে আমার মরে যেতে ইচ্ছে হয় বাবা। আমি কি করবো? আর সে সময়টাতেই আপনাকে অনেক বেশি মিস করি, সমস্ত সত্তা দিয়ে আপনাকে ডেকে উঠি, আকাশের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে বলি বাবা আপনি কোথায়? আমার ডাক কেন শুনতে পাচ্ছেন না? তখন যে খুব কাছে পেতে ইচ্ছে করে আপনাকে, জড়িয়ে ধরে আপনার বুকে মুখ লুকিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে, বলতে ইচ্ছে করে বাবা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে...অনেক বেশি কষ্ট। আপনি কেন বুঝলেন না আমার যে জড়িয়ে ধরে কাঁদার মত কেউ নেই, কেউ নেই আমার মাথায় হাত রাখার, আমাকে শাসন করার, কেন চলে গেলেন আমাকে একলা করে? কেন ভাবলেন না আমি আরো বেশি একা হয়ে যাবো, আরো বেশি এলোমেলো হয়ে যাবো? কেন ভাবেননি আপনার এই অন্য ধাতু দিয়ে গড়া মেয়েটাকে সহজে কেউ বুঝতে পারবেনা? সব স্বার্থপর, কেউ ভাবেনা আমার কথা, কেউ ভালবাসেনা আমায়... কেউনা...। মা তো শুধু পারেন চিন্তা করে অস্থির হতে। মাকে তো আপনি জানেনই বাবা, এই কাজটা উনি অনেক ভাল পারেন।
মা কি বলেন জানেন? বলেন এইবার একটু নিজের দিকে যেন তাকাই...হাহাহাহা আপনিই বলেন বাবা কুকুরের লেজ ৭০ বছর যদি চোং এ ভরে রাখা যায় তাহলে কি সোজা হবে? যার ৯ এ হয়না তার কি ৯০ এ হয়? এ কথাটা মাকে কে বুঝাবে? আমি নাকি নিজের কথা ভাববো? হাহাহাহাহা.........।
আচ্ছা বাবা একটা জিনিস আজকাল আমার মাথায় ঢুকছেনা, আমার কখনও নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে ইচ্ছে করেনা কেন? আমি কি অস্বাভাবিক মানুষ? আমি কি অসুস্থ? সারাক্ষন শুধু মানুষ নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে। খুব সাধারন যারা, যাদের কেউ নেই, যারা আমার উপর ডিপেন্ড করে, যারা আমার কথায় নতুন করে নতুন ভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে তাঁদের জীবনটা খুব সুন্দর করে গুছিয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কখনও পারি আবার কখনও পারিনা তাই বলে আমি হার মানিনা কারণ আপনার মেয়ে হেরে যাওয়া কি জিনিস তা জানেনা। এটা কি অন্যায়? আপনি হাসছেন বাবা? ভাবছেন নিজের জ়ীবন গুছানোর খবর নেই আবার অন্যের জ়ীবন নিয়ে ব্যস্ত? হ্যাঁ বাবা অনেকটা সে রকমই। যে জিনিসটা আমার মন থেকে আসেনা আমি তা এখনও করতে পারিনা। আর আমার জীবন গুছানোর ভার একজনের হাতে দিয়ে রেখেছি। উপরওয়ালাকে......... তিনি যা ভাল মনে করবেন তাই করবেন। আমার ব্যাপারে উপর আল্লাহর প্রশাসন কার্যকরী।
২০১০ সালটাও শেষ হয়ে এলো। নতুন একটা চাকরীতে জয়েন করছি বছরের প্রথমদিন। জানিনা কেমন হয়! দোয়া করবেন বাবা। এইবার একটু হাসেন...এইতো আমার সোনা বাবা, লক্ষী বাবা...। অনেক রাত হলো, আজ উঠি। ওহহো, বাবা আমার সাদা গোলাপের গাছগুলোর যত্ন নিবেন তার সাথে নিজেরও...ঠিক আছে? মনে থাকে যেন...।
আল্লাহ হাফেজ...।
ইতি......আপনার বড় মেয়ে...।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন